দেশজুড়ে বাড়ছে গৃহহিংসা ও পারিবারিক অস্থিরতা। সাম্প্রতিক সময়ে কর্ণাটক, দিল্লি এবং মধ্যপ্রদেশে ঘটে যাওয়া তিনটি চাঞ্চল্যকর ঘটনায় উঠে এসেছে এক অভিন্ন চিত্র— যৌন অসন্তোষ, পর্নগ্রাফির প্রভাব এবং আর্থিক সংকটের জটিল মিশেল, যা শেষ পর্যন্ত রক্তাক্ত পরিণতি ডেকে এনেছে।
🔴 কর্ণাটক: পর্ন ভিডিওর জেরে মৃত্যু স্বামীর
শনিবার গভীর রাতে কর্ণাটকের কোপ্পল জেলার মুনিরাবাদ এলাকায় ঘটে চাঞ্চল্যকর এক হত্যাকাণ্ড।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, রমেশ (৫১) নামের এক ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি ফিরে স্ত্রী মহাদেবীকে জোর করে মোবাইলে দেখা অশ্লীল ভিডিওর মতো করে যৌন সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতে চান।
এ নিয়ে দু’জনের মধ্যে তীব্র বচসা শুরু হয় এবং পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।
দীর্ঘদিনের মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার মহাদেবী রান্নাঘরের হামানদিস্তা দিয়ে স্বামীর মাথায় আঘাত করেন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রমেশের।
ঘটনার পর মহাদেবী নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন ও নিজের নির্যাতনের কাহিনি পুলিশকে জানান। বর্তমানে তিনি পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন এবং তদন্ত চলছে।
🔴 দিল্লি: স্বামীর যৌন অক্ষমতা ও পরকীয়া, শেষ পরিণতি মৃত্যু
দিল্লির নিহাল বিহার এলাকায় ঘটেছে দ্বিতীয় নৃশংস ঘটনা।
২৯ বছর বয়সী ফারজানা খান নিজের স্বামী মহম্মদ শাহিদ ওরফে ইরফানকে হত্যা করে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ।
তদন্তে জানা যায়, ফারজানা স্বামীর যৌন অক্ষমতা নিয়ে দীর্ঘদিন অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং স্বামীর খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
অন্যদিকে, ইরফান অনলাইন জুয়ায় বিপুল অর্থ হারিয়ে ঋণের জালে জড়িয়ে পড়েছিলেন, যা দাম্পত্যে আরও সমস্যা তৈরি করে।
পুলিশ ফারজনাকে গ্রেপ্তার করেছে এবং জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে।
🔴 মধ্যপ্রদেশ: ‘সেক্স রেকর্ডিং’-এ রাজি না হওয়ায় স্ত্রী খুন
ভিণ্ড জেলায় তৃতীয় ঘটনায় পর্ন-আসক্ত এক ব্যক্তি স্ত্রীকে খুন করেছেন বলে অভিযোগ।
পুলিশের বক্তব্য, অভিযুক্ত ব্যক্তি পর্নগ্রাফিতে আসক্ত ছিলেন এবং নিজের স্ত্রীকে সেই ভিডিওর মতো করে যৌন আচরণ রেকর্ড করতে বাধ্য করতে চাইতেন।
স্ত্রী রাজি না হওয়ায় রাগের মাথায় তিনি স্ত্রীকে হত্যা করেন।
পুলিশ অভিযুক্তের মোবাইল থেকে একাধিক অশ্লীল ভিডিও, উত্তেজক ওষুধ ও প্রাসঙ্গিক সার্চ হিস্ট্রি উদ্ধার করেছে।
🔍 বিশেষজ্ঞদের মত
সমাজবিজ্ঞানী ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন,
বর্তমান সমাজে পর্নগ্রাফির অনিয়ন্ত্রিত প্রভাব, যৌন অসন্তোষ ও আর্থিক অনিশ্চয়তা দাম্পত্য সম্পর্ককে ক্রমেই ভঙ্গুর করে তুলছে।
গোপন সম্পর্ক, আসক্তি ও মানসিক চাপ থেকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই চরম পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
তাঁদের মতে, এই ধরনের ঘটনা রোধে প্রয়োজন—
পারিবারিক কাউন্সেলিং ও যৌনশিক্ষা,
মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি,
এবং অনলাইন আসক্তি নিয়ন্ত্রণে সমাজ ও প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ।
📰 উপসংহার:
তিনটি ভিন্ন রাজ্যের এই ঘটনাগুলি একটাই বার্তা দিচ্ছে—
দাম্পত্য জীবনে মানসিক, যৌন ও আর্থিক চাপ যখন অসহ্য হয়ে ওঠে, তখন সম্পর্ক রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে।
সহিংসতা নয়, সংলাপ ও সচেতনতার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব।